আবুল হায়াতের জীবন কাহিনী। Abul Hayat Biography

সিনেমা থেকে হারিয়ে যাওয়া এক কিংবদন্তি অভিনেতার আজ কথা বলব আবুল হায়াতের জীবন কাহিনী। বর্ষীয়ান অভিনেতা আবুল হায়াত। আবুল হায়াত বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত খ্যাতিমান অভিনেতাই নন, একাধারে নাট্যকার, নির্মাতা, লেখক, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এবং পরিচালক। আবুল হায়াত মাত্র ১০ বছর বয়সে মঞ্চে নাটক শুরু করেন, তার প্রথম মন্ত্র নাটকের নাম টিপু সুলতান। 

তিনি ১৯৪৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ভারতের মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন।  3 বছর বয়সে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তার পরিবারের সঙ্গে চলে আসেন চট্টগ্রামে। 

আবুল হায়াতের বাবার নাম ছিল আব্দুস সালাম। আবুল হায়াতের পুরো নাম খন্দকার মোহাম্মদ শামসুল আরেফিন আবুল হায়াত গোলাম মাহবুব। তার ডাক নাম ছিল: রবি।

শিক্ষা ও পেশাগত জীবন

তিনি লেখাপড়া ছিলেন দারুন মেধাবী। তার স্কুল জীবন কাটে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট ও রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে. সেখান এসএসসিপাস করে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন।

১৯৬২ চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন পরে তিনি বুয়েটে ভর্তি হন। আবুল হায়াত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ১৯৬৭ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তিনি পরের বছর ১৯৬৮ সালেই ঢাকা ওয়াসায় নির্বাহী প্রকৌশলী কর্মরত হিসাবে যোগ দেন।

আবুল হায়াত ১৯৭৮ সালে লিবিয়ায় চলে যান এবং ১৯৮১ সাল পর্যন্ত সেখানে কাজ করেন। এর পরে তিনি ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে বেসরকারি চাকরিতে তার কর্মজীবন শুরু করেন।

অভিনয় জীবন

১৯৬৯ সালে টেলিভিশন “ইডিপাস” নাটক এর মাধ্যমে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেন আবুল হায়াত। তার প্রথম চলচ্চিত্র ছিল “তিতাস একটি নদীর নাম” (১৯৭৩) সালে। তিনি ১,০০০ টিরও বেশি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছেন।  এবং তিনি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।

লেখালেখি

লেখালেখি তিনি ছিলেন অন্যন। লেখক হিসেবে ১৯৯১ সালে আবুল হায়াতের প্রথম বই প্রকাশিত হয় ‘আপ্লুত মরু’ । তার লেখা বইয়ের সংখ্যা মোট ২৮ টিরও বেশি। সম্প্রতি তিনি তার আত্মজীবনী “রবি পথ” প্রকাশ করেছেন, যা লিখতে তার ১০ বছর সময় লেগেছে।

ব্যক্তিগত জীবন

ব্যক্তিগত জীবণে ১৯৭০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শিরিন হায়াতের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন আবুল হায়াত। তাদের দুই কন্যা, বিপাশা হায়াত এবং নাতাশা হায়াত, যারা দুজনেই অভিনেত্রী। তার জামাতা তৌকীর আহমেদ এবং শাহেদ শরীফ খান ও অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত।

পুরস্কার ও সম্মাননা

আবুল হায়াত তার অভিনয়ের জন্য ২০০৭ সালে “দারুচিনি দ্বীপ” চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ২০১৫ সালে সরকার কর্তৃক একুশে পদক লাভ করেন।

ক্যান্সারের সঙ্গে সংগ্রাম

সম্প্রতি, আবুল হায়াত জানিয়েছেন যে তিনি গত 3 বছর ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। তার স্ত্রী শিরিন হায়াত এই সময়ে তার সবচেয়ে বড় সহযোদ্ধা হিসেবে পাশে ছিলেন।

শেষ কথা

আবুল হায়াতের জীবন ও কর্ম বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক বিশাল অবদান রেখে চলেছে। তার অভিনয়, লেখালেখি এবং ব্যক্তিগত সংগ্রাম আমাদের সকলের জন্য প্রেরণার উৎস জাগায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top